মনিটর কি | মনিটর কত প্রকার

মনিটর হল একটি আউটপুট ডিভাইস। কম্পিউটারের সাথে টিভি পর্দার মতো যে অংশ থাকে তাকে মনিটর বলে। কম্পিউটারের সকল ধরনের কাজগুলো মনিটরে দেখা যায়। 

মনিটরের কাজ হল লেখা ও ছবি দেখানো। মনিটরকে ভিজুয়্যাল ডিসপ্লে ইউনিটও বলা হয়ে থাকে। টিভি কার্ড ব্যবহার করে মনিটর দিয়ে টিভির মতো টেলিভিশন স্টেশন থেকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলো দেখা যায়।
মনিটর
মনিটর

আর মনিটরের স্ক্রীনের এক কোণা থেকে অন্য কোণার মাপকে মনিটরের সাইজ হিসেবে ধরা হয়। সাধারণত মনিটরের সাইজ হল ১৪, ১৫, ১৭, ২১ এবং ২৮ ইঞ্চি হয়। 

এছাড়াও ডেস্কটপ পাবলিশিং এবং গ্রাফিক্সের কাজ করার জন্যে অথবা বড় স্প্রেডশিটে কাজ করার জন্যে বড় সাইজের মনিটর বেশি সুবিধাজনক হয়।

মনিটর কত প্রকার ও কি কি?

মনিটর সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকে যথাঃ
  • সিআরটি মনিটর (CRT Monitor)
  • এলসিডি মনিটর (LCD Monitor)
  • এলইডি মনিটর (LED Monitor)

সিআরটি মনিটর কি?

ক্যাথোড রে টিউবযুক্ত মনিটরকে সিআরটি মনিটর বলে। CRT এর পূর্ণরূপ হল Cathode Ray Tube। যাতে টিউবের ভেতরের দিকে ফসফরাস নামক এক ধরণের রাসায়নিক পদার্থের প্রলেপ লাগানো থাকে। 

আর সাদাকালো সিআরটি মনিটরে ইলেক্ট্রন গান থাকে। এবং রঙিন মনিটরে তিনটি মৌলিক রঙ যেমনঃ লাল (Red), সবুজ (Green), আসমানী (Blue) ইত্যাদি প্রদর্শনের জন্য তিন ধরণের ইলেক্ট্রন গান থাকে। 

ইলেক্ট্রন গান থেকে নির্গত ইলেক্ট্রন ফসফরের উপর আঘাত হানে। ইলেকট্রন রশ্মিগুলো আঘাত হানার পর ফসফর দানাগুলো আলোকিত হয়ে থাকে। এবং পর্দায় ছবি হিসেবে পরিস্ফুটিত হয়। 

তাছাড়া সিআরটি মনিটরগুলো কম উজ্জ্বল ডিসপ্লের হয়ে থাকে। আকারে অপেক্ষাকৃত বড় ও বিদুৎ খরচ বেশি হওয়ায় মনিটরগুলোর ব্যবহার দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সিআরটি মনিটরের ওজন বেশি সহজে বহন করা যায় না। 

এলসিডি মনিটরের চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ বেশি খরচ হয়। তুলনামূলকভাবে দাম কম হয়। বর্তমানে এ ধরণের মনিটর আর তেমন একটা তৈরি করা হচ্ছে না।

Cathode Ray Tube কি?

ক্যাথোড রে টিউব (CRT) এ সবচেয়ে পুরানো ইলেকট্রনিক ইমেজ তৈরী করার পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের ভ্যাকুয়াম টিউব। যা আংশিক শুন্য এবং এই অংশটি খুব অল্প চাপে নিস্ক্রিয় গ্যাস ভরা থাকে। 

এই টিউবে একটি নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড থাকে যাকে ক্যাথোড (Cathode) বলা হয়। এই ক্যাথাোড থেকে একটি ইলেকট্রন বীম (Electron beam) বা রে পজেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রোড এ্যানোড (Anode) এর দিকে নিক্ষেপ করে। যা স্ক্রিনে ডিসপ্লে আকারে দেখা যায়।

এলসিডি মনিটর কি?

LCD এর পূর্ণরূপ হল Liquid Crystal Display। কম্পিউটারে ব্যবহৃত এক ধরনের ডিসপ্লে ইউনিট। যা এলসিডি মনিটরে এলসিডি (লিকুইড ক্রিস্টাল ডিসপ্লে) প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এটির পর্দা সমতল হয়। 
একে ফ্লাট প্যানেল মনিটর (Flat Panel Monitor) ও বলা হয়ে থাকে। এলসিডি মনিটরে বিশেষ ধরনের তরল ক্রিস্টাল ব্যবহার করা হয়। যা স্বাভাবিক অবস্থায় স্বচ্ছ। বিদ্যুৎ পরিবাহিতার মাধ্যমে স্বচ্ছ ক্রিস্টাল চার্জিত হয়ে ছবি ফুটিয়ে তােলে থাকে। 

ক্যালকুলেটর কিংবা ডিজিটাল ঘড়িতে এলসিডি ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়। ল্যাপটপ বা নোটবুক কম্পিউটারে এ ধরনের মনিটর ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য বিভিন্ন মডেলের ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর পাওয়া যায়। 

কিন্তু এগুলাের দাম সাধারণ সিআরটি মনিটরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি হয়ে থাকে। ফ্ল্যাট প্যানেল মনিটর সিআরটি মনিটরের চেয়ে ওজনে অনেক হালকা ও অল্প জায়গা দখল করে। এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।

Liquid Crystal Display (LCD) কি?

LCD এর পুরো নাম হল Liquid Crystal Display। এটি কম্পিউটারে ব্যবহার এক ধরনের ডিসপ্লে ইউনিট। এতে ব্যবহার করা হয় তরল কেলাস বা Liquid Crystal। তরল কেলাস হল জড় পদার্থের এমন একটি অবস্থা যে অবস্থায় পদার্থ কঠিন ও তরল অবস্থার ধর্ম একইসাথে ধারণ করে থাকে। 

কম্পিউটারের এলসিডি ডিসপ্লেতে বিশেষ কৌশলে এই Linuid Crystal ব্যবহার করা হয়। এই উপাদানটি দুটো ট্রান্সপারেট তড়িৎ দ্বারের ভেতরে রক্ষিত হয়। যখন একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র এর উপর প্রয়োগ করা হয়। তখন অণুগুলো বৈদ্যুতিক ক্ষেত্রের সাথে সমন্বিত হয়। 

এটি আলােক সঞ্চালনের ক্ষেত্রে মেরুকরণে সহায়তা করে থাকে। একটি পােলারাইজড ফিল্টার দ্বারা ইলেকট্রোড ব্লকের উপর আবরিত করা হয়। আর এই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয় লিকুইড ক্রিস্টাল সেল। এই সেলগুলো কলাম ও সারিতে বিন্যস্ত থাকে। 

এই সেলগুলো জ্বালা বা নেভার মধ্য দিয়ে স্ক্রিনে ছবি ফুটে উঠে। অল্প বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় বলে কিছু কিছু কম্পিউটারে (ল্যাপটপ, নােটবুক পিসি) এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ফ্লাট প্যানেল মনিটরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

এলইডি মনিটর (LED Monitor) কি?

LED এর পূর্ণরূপ হল Light Emitting Diode। LED মনিটর LCD মনিটরের একটি উন্নত ভার্সন। এটি LCD মনিটরের মতােই কাজ করে। কিন্তু এর ব্যাকলাইট ভিন্ন ধরণের হয়। 

LCD মনিটর অপেক্ষা ডিসপ্লে কোয়ালিটি ভাল মানের এবং বিদ্যুৎ খরচ ৪০% কম হয়। এটি চোখের জন্য বেশি স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং বেশিদিন টিকে থাকে। তৈরি করার সময় LCD মনিটরের মতাে মারকারি ব্যবহার করা হয় না বিধায় এটি বেশি পরিবেশ বান্ধব হতো। 

এর মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। তবে দিন দিন যেভাবে এর ব্যবহার বাড়ছে তাতে করে অদূর ভবিষ্যতে এর মূল্য দ্রুত কমে আসবে।

মনিটরের বৈশিষ্ট্য?

মনিটরের বৈশিষ্ট্য নিচে আলােচনা করা হলঃ
  • রেজুল্যুশন (Resolution)
  • পিচ বা পিক্সেল (Pitch or Pixel)
  • মাল্টি ফ্রিকোয়েন্সী
  • নন-ইন্টারলেসড
  • লাে-রেডিয়েশন

রেজুল্যুশন (Resolution)

একটা মনিটরের রেজুল্যুশন যত বেশি, মনিটরটি তত ভালাে, অর্থাৎ ঐ মনিটরের অক্ষর বা চিত্র তত পরিচ্ছন্ন ও স্পষ্ট দেখাবে। মনিটরের পর্দাকে আড়াআড়ি এবং লম্বালম্বি অনেকগুলাে রেখায় ভাগ করা হয়। আর ঐ ভাগকে রেজুল্যুশন বলে। যেমনঃ 640x480, 1024x764, ইত্যাদি। 

পিচ বা পিক্সেল (Pitch or Pixel)

একটি আড়াআড়ি এবং একটি লম্বালম্বি রেখার Cross-Section এর diameter কে পিক্সেল বা পিচ বলে। পিক্সেল যত কম হবে, মনিটর তত ভালাে হবে। অন্যদিকে পিক্সেল রেজুল্যুশনের বিপরীত অর্থে ব্যবহার হয়। বর্তমানে ০.২৮ মিলিমিটার পিক্সেলের মনিটর ব্যবহৃত হচ্ছে।

মাল্টি ফ্রিকোয়েন্সী

এ বৈশিষ্ট্য থাকলে মনিটরটি অক্ষর প্রদর্শনের সময় এক সফটওয়্যার থেকে অন্য সফটওয়্যারে পরিবর্তনের কারণে চিত্র ও লেখা একই সাথে দেখানোর সময় কম্পমান হবে না। এবং চোখের উপর কোন বাড়তি প্রেসার বা চাপ পড়বে না।

নন-ইন্টারলেসড

এটা মনিটরের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। টেলিভিশনের ছবি চোখে দৃশ্যমান এবং গতিময় রাখার জন্য প্রতিটি ছবিকে ফ্রেম হিসেবে পাঠানাে হয়। একটা ফ্রেমে ২৫টি লাইন থাকে। এর গতিময়তা দেওয়ার জন্য এক ফ্রেমকে অন্য ফ্রেমের উপর ১, ৩, ৫, ৭ এবং ২, ৪, ৬, ৮ ইত্যাদি পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা হয়।

আর তাই এ ব্যবস্থাকে ইন্টারলেসিং বলে। কম্পিউটারের কার্যগতি টেলিভিশনের ফ্রিকোয়েসীর চাইতে অনেক অনেক বেশি। মনিটরের চিত্র নন-ইন্টারলেসড থাকা ভাল। ফলে চোখ ভাল থাকবে ও দৃশ্যমানতা বৃদ্ধি পাবে।

লাে-রেডিয়েশন

বর্তমানে ব্ল্যাক ট্ৰিন্ট্রিন পদ্ধতি আবিষ্কারের ফলে মনিটরের পর্দাকে এমন ভাবে তৈরি করা হয় যাতে ভিতরের ইলেকট্রনসমূহ বাইরে যথাসম্ভব না বেরিয়ে পর্দায় লেখার উজ্জ্বলতা বাড়াবে আর সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করবে।

মনিটরের কাজ?

মনিটরের কাজ হল প্রক্রিয়াকৃত তথ্য প্রদর্শন করা। এবং কোন সমস্যা হলে দ্রুত আউটপুট ডিভাইস হিসেবে কাজ করা। এরপর ব্যবহারকারীকে অবগত করা।

মনিটরের প্রয়োজনীয়তা ও ব্যবহার?

কম্পিউটারের প্রক্রিয়াকরণের ফলাফল আউটপুট হিসেবে পর্দায় প্রদর্শন করানোর জন্য মনিটর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মনিটর ব্যতীত কম্পিউটারের মূলত কোন ধরনের কাজ করা সম্ভব হয় না। 

বিভিন্ন ধরনের গ্রাফিক্স, নকশা, রেখাচিত্র ইত্যাদি নিখুঁতভাবে তৈরির কাজে মনিটর ব্যবহৃত করা হয়। প্রকাশনা শিল্পে টেক্সট ও গ্রাফিক্স এর যাবতীয় সম্পাদনার কাজগুলো মনিটরের পর্দায় দেখে দেখে করা হয়ে থাকে। মনিটর ছাড়া এই কাজগুলো করা সম্ভব হয় না।

বিভিন্ন ধরনের ভিডিও দেখা ও গেম খেলার জন্য মনিটর ব্যবহার করা হয়। মনিটরকে টিভি কার্ডের সাথে যুক্ত করে সেটিকে টিভিসেট হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

মনিটর কি ধরনের ডিভাইস? 

মনিটর হল আউটপুট ডিভাইস।

মনিটর দেখতে কেমন? 

এক কথায় বলতে গেলে মনিটর দেখতে ঠিক টিভির মতো দেখায়। 

মনিটর এর দাম কত? 

বাংলাদেশে সর্বনিম্ন চার হাজার টাকা থেকে মনিটর পেয়ে পাবেন। আর ভারতে আরেকটু কম। তবে ৮০০০ টাকার এর মধ্যে আপনারা ভাল মনিটর পেয়ে যাবেন। 

কোন মনিটর সবচেয়ে ভাল? 

কোম্পানির কথা বললে LG, Dell, Asus, Acer, HP, Samsung, BenQ, Lenovo এই কোম্পানিগুলো বেশ জনপ্রিয় ও মানেও ভাল।
Lekha-Lekhi

lekha-lekhi.com এই ওয়েবসাইটটি মূলত একটি তথ্যমূলক ব্লগ। নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন