বিশ্বগ্রাম কি | বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ কী কী

বিশ্বগ্রাম শব্দটি দ্বারা বিশ্বব্যাপী তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বা ইন্টারনেটকে বুঝানো হয়। বিশ্বগ্রাম হল তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর এমন একটি পরিবেশ। 

বিশ্বগ্রাম
বিশ্বগ্রাম

যেখানে দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করেও পৃথিবীর সকল মানুষকে একটি একক সমাজে বসবাস করার সুবিধা দেয়। এবং একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে।

বিশ্বগ্রাম কাকে বলে?

বৈশ্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার সমৃদ্ধ স্থানকে বিশ্বগ্রাম বলে। 

বিশ্বগ্রাম সৃষ্টির কারণ?

বিশ্বগ্রাম প্রক্রিয়ার প্রধান কারণ হল তথ্য ও যােগাযােগ প্রযুক্তির বিস্ময়কর আর্বিভাব। বিশ্বকে যুক্ত করার সর্বপ্রথম প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ঔপনিবেশিক যুগের প্রথম দিকে সারা বিশ্ব জুড়ে টেলিগ্রাফ লাইন স্থাপনের মাধ্যমে। 

এরপর বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে কম্পিউটারের উদ্ভাবন ঘটে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে ARPANET নামক প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৯৬৯ সালে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু হয়। 

ইন্টারনেট এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক যােগাযােগ এখন বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যােগাযােগের একটি মাধ্যম। বিশ্বগ্রামের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল বিশ্বের কেন্দ্রের এবং কেন্দ্রের বাইরে কোন কোন অঞ্চলে বিশাল বহুজাতিক সংস্থা গড়ে উঠা। 

তাছাড়া বহুজাতিক সংস্থা তাদের প্রযুক্তি ও ব্যবসায়িক কৌশল এক দেশ থেকে অন্য দেশে প্রসার ঘটায়। মার্কিন বহুজাতিক সংস্থাগুলাে ইউরােপে উৎপাদন শুরু করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর। 

১৯৭০ সালের পর ইউরােপীয় সংস্থাগুলাে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শুরু করে। একই সময়ে জাপানী সংস্থাগুলাে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় উৎপাদন শুরু করে। এভাবে বহুজতিক সংস্থা অর্থনৈতিক একীভবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বিশ্বগ্রামের উপাদান কয়টি ও কি কি?

বিশ্বগ্রামের উপাদান ৫টি হলঃ
  • হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট যন্ত্রপাতি
  • প্রােগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার
  • ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা
  • ইন্টারনেটের সংযুক্ততা
  • ডেটা বা ইনফরমেশন

হার্ডওয়্যার বা কম্পিউটার সংশিষ্ট যন্ত্রপাতি

হার্ডওয়্যার বলতে কম্পিউটারের সকল ফিজিক্যাল ইলেকট্রোনিক কম্পােনেন্ট গুলোকে বুঝায়। যেমনঃ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ, প্রিন্টার, বিভিন্ন প্রিন্টেড সার্কিট বাের্ড, ডিসপ্লে ইত্যাদি। বিশ্বগ্রাম যেকোন ধরনের তথ্য ও যোগাযোগ আদান প্রদানের জন্য ব্যবহার করা হয়। 

এছাড়াও কম্পিউটারের সাথে মােবাইল ফোন, স্মার্ট ফোন, অডিও ও ভিডিও রেকর্ডার, রেডিও, টেলিভিশন, ওয়েব ক্যাম, স্যাটেলাইট ইত্যাদি হার্ডওয়্যারের অন্তর্ভুক্ত।


প্রােগ্রামসমূহ বা সফটওয়্যার

কম্পিউটারকে কার্যোপযােগী করার জন্য এবং কম্পিউটার দ্বারা কোন সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহার করা প্রােগ্রামসমূহকে সফটওয়্যার বলে। বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ডওয়্যারের পাশাপাশি সফটওয়্যারের একান্ত প্রয়ােজন হয়। 

সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অপারেটিং সিস্টেম, কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার, ব্রাউজিং সফটওয়্যার,  প্রােগ্রামিং ভাষা ইত্যাদি।

ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা

বিশ্বগ্রামের উপাদানের মধ্যে ব্যক্তিবর্গের সক্ষমতা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বগ্রাম তৈরির জন্য মানুষের সক্ষমতা অত্যাবশ্যক।

ইন্টারনেট সংযুক্ততা

ইন্টারনেটের সংযুক্ততা ছাড়া বিশ্বগ্রাম প্রায় অসম্ভব। সারা দুনিয়া জুড়ে বিস্তৃত পরস্পরের সাথে সংযুক্ত অনেকগুলাে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সমষ্টিতে গঠিত ইন্টারনেট বিশ্বগ্রামের ধারণাকে আজ সত্যি বাস্তবে পরিণত হয়েছে।

ডেটা বা ইনফরমেশন

ডেটা হচ্ছে তথ্যের একটি উপাদান। ডেটা হল তথ্যের মৌলিক ধারণা যা সাজালে বা প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে ইনফরমেশন তৈরি হয়। এটি অঙ্ক, বর্ণনা, টেক্সট, ইমেজ, অডিও ভিডিও এমনকি গ্রাফও হতে পারে। 

বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠায় ডেটা প্রসেসিং করে মানুষের কল্যাণে তথ্যে পরিণত করা হয়। বিশ্বগ্রাম সৃষ্টিতে ডেটার আদান প্রদান অধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

বিশ্বগ্রামের সুবিধা?

  • মুহুর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোন দেশে যেকোন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়।
  • অনলাইন থেকে যেকোন লাইব্রেরি থেকে যত ইচ্ছে বই পড়া যায়। এবং নিজ ঘরে বসেই নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষা লাভ করা যায়।
  • বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে সহজে জানা যায়।
  • ঘরে বসে ই ব্যবসা ও বাণিজ্য করা যায়।
  • ভৌগোলিক দূরত্বের পরিমাণ কমে যায়।
  • ব্যবস্থাপনার খরচ ও কমে যায়।
  • ঘরে বসেই অন্য দেশের বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উপার্জন করা যায়।

বিশ্বগ্রামের অসুবিধা?

  • ইন্টারনেট হ্যাকিং করে তথ্য বা ডেটক চুরি হয়। এবং তথ্যের গোপনীয়তা ভঙ্গ হয়।
  • ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
  • জনগণ কোন তথ্যের সত্যতা যাচাই না করেই ভুল ধারনা নিয়ে বসে থাকেন।
  • ভার্চুয়াল জগতে বেশি সময় ব্যয় করার ফলে সত্যিকারের বন্ধুর চেয়ে ভার্চুয়াল বন্ধুর সংখ্যা বাড়ে। যার ফলে মানুষের মধ্যে দূরত্ব অনেক বাড়ে। এবং মানুষ তার বাস্তব জীবনের চেয়ে ভার্চুয়াল জগতের প্রতি অনেক বেশি আসক্ত হয়ে পড়ে যায়৷ যার ফলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সাইবার আক্রমণ সংঘটিত হয়।
  • এর সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ফলে একটি দেশের নিজস্ব সংস্কৃতির বিলুপ্তি ঘটে।
  • প্রযুক্তির ব্যবহারের পরিমাণ বেশি হওয়ার ফলে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা সৃষ্টি হয়।
  • বেকারত্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • পর্নোগ্রাফির আসক্তির ফলে সামাজিক অবক্ষয়ের সৃষ্টি হয়।

বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রবক্তা কে?

কানাডিয়ান দার্শনিক ও লেখক হারবার্ট মার্শাল ম্যাকলুহান হলেন বিশ্বগ্রাম ধারণার প্রবর্তক।

বিশ্বগ্রাম ধারণার সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলো কি কি?

বিশ্বগ্রাম ধারণার সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানগুলো হলঃ যোগাযোগ, কর্মসংস্থান, অফিস, বাসস্থান, ব্যবসা বাণিজ্য, সংবাদ, শিক্ষা, চিকিৎসা সেবা, সাংস্কৃতিক বিনিময়, গবেষণা, বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ ইত্যাদি।

বিশ্বগ্রামের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনটি?

বিশ্বগ্রামের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল কানেক্টিভিটি।
Lekha-Lekhi

lekha-lekhi.com এই ওয়েবসাইটটি মূলত একটি তথ্যমূলক ব্লগ। নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন