ড্রোন কি | ড্রোন কেন ব্যবহার করা হয়

দুর্যোগপূর্ণ কোন এলাকায় কিছু লোক আছে। এখন আপনাকে দায়িত্ব দেয়া হলো তাদেরকে সুরক্ষিতভাবে উদ্ধার করার জন্য। কিন্তু আপনি তখন দোটানায় পড়ে গেলেন। 
ড্রোন
ড্রোন

ভাবছেন যদি উড়জাহাজ দিয়ে লোকগুলোকে উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়। তাহলে একজন পাইলটের জীবনকে বড় হুমকির মুখে রাখতে হচ্ছে। আবার পাঠিয়েও না দেওয়ার কোন উপায় নেই। 

আর তাই এমতাবস্থায় কি করবেন তা যদি খুঁজে না পান। তবে ড্রোন নামক এই জিনিসটি হতে পারে আপনার একটি বিকল্প সমাধান। 

হ্যা বিস্ময়েরও বিস্ময় এই ড্রোন এর সেই জানা ও অজানা সুন্দর কিছু তথ্য নিয়েই আজকে আমাদের বিস্তারিত আলোচনা। 

ড্রোন কি?

ড্রোন হল এমন এক ধরনের উড়োজাহাজ বা বিমান যা পাইলট ছাড়া চলাচল করে। ড্রোন এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সামরিক কাজে। 

প্রচলিত বিমান যুদ্ধে পাইলটের জীবনহানি বা শত্রুর হাতে বন্দী হওয়ার যে আশঙ্কা থাকে তা এড়াতেই এই পাইলটবিহীন যুদ্ধবিমান। অ্যাভিয়েশন ও স্পেস এর দিক থেকে ড্রোনকে একটি পাইলট বিহীন বিমান হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।

ড্রোন এর বৈশিষ্ট্য কি কি?

বৈশিষ্ট্যগত দিক দিয়ে ড্রোন ক্যামেরার নিজস্ব কতগুলো ফাঙ্কশন আছে। যা এই যন্ত্রগুলোকে অনন্য করে তোলেঃ
  • দক্ষতা
  • মনুষ্যহীন ও রিমোটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
  • কম ব্যয়সাপেক্ষ 
  • কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত
  • সহজেই বহনযোগ্য

দক্ষতা

ড্রোন হল অনেকটাই ছোট, মজবুত ও সাধারণ যানবাহনের তুলনায় অধিক উচ্চ স্তরে উড়তে সক্ষম। যা এদেরকে সহজেই কঠিন রুটে চলাচল করতে সাহায্য করে থাকে। ও কোন রকমের কোন ট্রাফিক জ্যামে না আটকে দ্রুত নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছতে পারে।

মনুষ্যহীন ও রিমোটের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

এই যন্ত্রটি হল এমন এক যন্ত্র। যা মানুষকে বাহক হিসেবে চড়তে হয় না। বরং ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে। আর নাহলে আপনাকে রিমোট বা কোন অ্যাপ ব্যবহার করে, যেকোন জায়গা থেকে তার যাত্রা পথকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

কম ব্যয়সাপেক্ষ

কোন প্রয়োজনে হেলিকপ্টার কিংবা সাধারণ বাহন যা খরচ নেবে। ড্রোন তার থেকে বহু কম খরচেই আপনাকে উন্নত মানের পরিষেবা দিতে সক্ষম হবে। 

কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত

কম্পিউটারের দ্বারা সম্পূর্ণভাবে পরিচালিত হওয়ায় ড্রোনগুলো সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে কাজ করতে সক্ষম হয়। আর এখানে কোন ধরণের ত্রুটির সম্ভাবনা খুবই কম থাকে।

সহজেই বহনযোগ্য

এই ড্রোনগুলো নানান ধরণের ও আকারের হয়। তবে এর সব কটি মডেলই কম বেশি হালকা এবং দ্রুত উড়তে সক্ষম ও সহজেই বয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।  

ড্রোন কিভাবে কাজ করে?

ড্রোন যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তার নাম হল UAV (Unnamed aerial vehicle)। UAV চালাতেই রিমোটের প্রয়োজন হয়। সামরিক UAV হতে থাকে ককপিট, স্পাই ক্যামেরা, জিপিএস, সেন্সর, রাইটিং সেন্সর ইত্যাদি। ড্রোনের মধ্যে দুটি সিস্টেম থাকে। 

একটি এর নিজের সিস্টেম আরেকটি হচ্ছে কন্ট্রোলার সিস্টেম। একে যে কমান্ড দেয়া হবে সেই অনুযায়ী কন্ট্রোলার সিস্টেম কাজ করবে। একটি ড্রোনে রাডার পজিশন,  Gyro পজিশন সিস্টেম, ফ্লাইজোন, FTP প্রভৃতি প্রযুক্তি সংযুক্ত থাকে। 

সামরিক ক্ষেত্রে ড্রোনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল কোন মিসাইল ছাড়ার পরে ক্রুজ মিসাইলের মতো নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে থাকে। আপনার হাতে একটা জয়স্টিক নিয়ে এবং জিপিএস ব্যবহার করে একটা ড্রোন চালাতে আপনার কিছুটা গেম খেলার মতোই লাগবে। 

তাই ড্রোন দিয়ে খেলতে অনেকেই খুব ভালোবাসেন। আর যাই হোক সরল সিধে ড্রোনের পিছনে অর্থাৎ এর ভিতরের বিষয়গুলো কিন্তু একটু জটিল ধরনের হয়। একটি ড্রোনের ভিতর আপনি যে জিনিসগুলো দেখতে পাবেন তা হলো একটি অ্যাক্সিলোমিটার, একটি জাইরোস্কোপ ও অন্যান্য কিছু অংশ। 

আর এগুলো সম্মিলিতভাবে একটি ড্রোনকে উড়াতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হল এই অংশগুলো কাজ কিভাবে করে, আসলে ড্রোন কাজ করার পেছনে একটুখানি পদার্থবিজ্ঞানের সুত্রের ব্যবহার করা হয়। 

ড্রোন প্রযুক্তি মূলত খুবই হালকা রকমের পদার্থ দিয়ে তৈরি হয়। আর এই হালকা পদার্থগুলোই ড্রোনকে অতি উচ্চতায় উড়তে সাহায্য করে। তবে একটি ড্রোন মূলত কয়েকটি ধাপে কাজ করে থাকে সেগুলো হলঃ
  • কানেক্টিভিটি
  • রোটার ব্যবহার করে উড়া ও ডানে বায়ে মোড় নেয়া
  • ড্রোন ক্যামেরা
  • অ্যাক্সেলেরোমিটার এবং অ্যালটিমিটার

কানেক্টিভিটি

সর্বপ্রথমেই যা আসে তা হল কানেক্টিভিটি। হ্যাঁ ড্রোন তার তারবিহীন সংযোগ এর জন্যই দূর থেকে কোন স্মার্টফোন বা ট্যাব দ্বারা পরিচালিত হতে সক্ষম। আর এই তারবিহীন সংযোগ একজন পাইলটকে দূরে থেকেই ড্রোন ও তার আশেপাশের পরিবেশের উপর নজড় রাখার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। 

ড্রোনের জিপিএস সংযোগের কারণে এর জন্য কেবল একটি নির্দিষ্ট লোকেশন ঠিক করে দেয়া যায়।

রোটার ব্যবহার করে উড়া ও ডানে বায়ে মোড় নেয়া

ড্রোনগুলো যে আকাশে ভেসে থাকে বা উড়ে তার পিছনের মূল কাজটা কিন্তু রোটারের। আসলে রোটার অভিকর্ষের বিরুদ্ধে সমান বল প্রয়োগ করে এটিকে উপরে রাখতে সহায়তা করে থাকে। 

আর ড্রোনে থাকা ৪টি রোটারের ভেতর ২টি ঘড়ির কাটার দিকে ঘুরতে থাকে যাতে ড্রোনটি উড়তে পারে। অবশিষ্ট দুটি রোটার এর পাশের বল এর ভারসাম্য রাখতে কাজ করে।

ড্রোন ক্যামেরা

কিছু কিছু ড্রোনের সাথে বিল্ট ইন ক্যামেরা থাকে। এর মাধ্যমে বুঝা যায় ড্রোনটি ঠিক কোন স্থানে উড়ছে। এছাড়াও ড্রোন যদি কোন স্থানে ডাইরেক্ট লাইন ছাড়াই উড়তে থাকে তবে তাও সহজে নির্ণয় করা যায়। অনেকেই আবার এই ক্যামেরা ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গার ছবি তোলার জন্য। 

আবার কেউ কেউ ভিডিও এর কাজেও এটি ব্যবহার করে থাকে। তাছাড়া বর্তমান সময়ে সকল সিনেমা তৈরি করার ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করে ভিডিও ক্যাপচার করা হয়।

অ্যাক্সেলেরোমিটার এবং অ্যালটিমিটার

অ্যাক্সেলেরোমিটার মূলত ড্রোনের বিভিন্ন তথ্য বা উপাত্ত সরবরাহ করে থাকে। যেমন ড্রোনটি কত স্পিডে উড়ছে বা কোন ডাইরেকশনে চলছে তা অ্যাক্সেলেরোমিটার এবং অ্যালটিমিটার নির্দেশ দেয়।

অপরদিকে অ্যালটিমিটার মূলত ড্রোনটি কত উচ্চতায় উড়ছে সেই তথ্য বা ডেটা সরবরাহ করে থাকে। আর এর মাধ্যমে খুব সহজেই ড্রোনকে নিরাপদে মাটিতে ফিরিয়ে আনা যায়।

একটি ড্রোন আসলে কিভাবে ওড়ে?

সহজ তারহীন প্রযুক্তি ও পদার্থবিদ্যার সংযুক্ত প্রয়াসেই বাধাহীনভাবে একটা ড্রোন সহজে আকাশে উড়তে পারে। 

ড্রোন কবে আবিষ্কার হয়?

১৯১৬ সালে স্যার নিকোলাস টেসলা প্রথম এই পাইলট বিহীন এয়ারক্রাফট এর ধারণা দেন। আর তার সুত্র ধরেই প্রথম ড্রোন চালু করা হয় ১৯১৭ সালের দিকে। যা ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। 

ব্রিটেনের এই ড্রোনটি ছিল রেডিও দ্বারা পরিচালিত এবং ইহা ১৯১৭ সালের মার্চ মাসেই চালু হয়। অন্যদিকে ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে আমেরিকার কেটারিং বাগ নামে ড্রোনটি প্রথম আকাশে উড়াল দেয়। 

আর এই দুটি ড্রোনই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তাদের ক্ষমতার যথাযথ পরিচয় দেয়। এরপর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এই মাঝখানের সময়টাতে ড্রোনকে আরও বেশি কার্যকরভাবে বানানোর পিছনে কাজ চলতে থাকে। ঠিক এর পরের সুত্র ধরে রেডিও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ১৯৩৫ সালে ব্রিটেন একাধিক ড্রোন আবিষ্কার করে। 

যুক্তরাষ্ট্র উক্ত সময়টিতে ড্রোন কার্যকর এর পিছনে কাজ করতে থাকে। তবে তাদের ড্রোন এর ব্যবহার এই সময়টিতে ছিল শুধু টার্গেট অনুশীলন করার জন্য। আর ইহাই ছিল সর্বপ্রথম বাণিজ্যিকভাবে ড্রোনের আবিষ্কার ও ব্যবহার।

ড্রোন কেন ব্যবহার করা হয়?

সচরাচর আমাদের সকলের চোখে যে ড্রোনগুলো পড়ে তা মূলত আকারে অনেকটাই ছোট ও বাচ্চাদের খেলনা হিসাবেই প্রকাশ পায়। কিন্তু খেলনাতেই কি এর ব্যবহার পরিসমাপ্তি? কিন্তু তা মোটেও নয়। এটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি এর ব্যবহারের পরিসরও বৃহৎ আকারের। 

বিমানের সাইজের ড্রোন মূলত দূরবর্তী স্থান হতে ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়। আর এর ব্যবহার সংকট হয় ঠিক তখন যখন কোন একটা দুর্যোগপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষকে নিরাপদে নিয়ে আসার প্রয়োজন পড়ে। 

আর এর মাধ্যমে কোন পাইলটের জীবনকে আশংকায় না ফেলেই মানুষকে উদ্ধার করা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি যে ক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে সামরিক ক্ষেত্র। আর এই ছোট ড্রোনগুলো খেলনার পাশাপাশি শোভা পায় বিভিন্ন ফটোগ্রাফারের কাছে। 

এর মাধ্যমে তারা উপর হতে ছবি তুলতে পারেন। আর এভাবেই মানুষের নানা মুখে চাহিদাকে একাই বিভিন্নরূপে পূরণ করে যাচ্ছে এই ড্রোন। যার শত শত উদাহরণ আমাদের সবার সামনেই বিদ্যমান আছে।

ড্রোন ব্যবহারের সুবিধা?

ড্রোন ব্যবহারের সুবিধা সমূহ হলঃ
  • সামরিক ক্ষেত্রে
  • উদ্ধার
  • পণ্য ডেলিভারী

সামরিক ক্ষেত্রে

ড্রোনের সৃষ্টি যেহেতু সামরিক প্রয়োজনকে কেন্দ্র করেই করা হয়েছিল। আর তাই এর বেশির ভাগ ব্যবহার সামরিক কেন্দ্রিক হয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশেই এই ড্রোনকে ২৪ ঘন্টা পাহারা দেয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক দেশের মিলিটারিই আবার তাদের টার্গেট অনুশীলনের জন্য এই ড্রোন ব্যবহার করে।

উদ্ধার

দূর্যোগপূর্ণ স্থান থেকে মানুষকে উদ্ধারের জন্য ড্রোন হলো একটি অনন্য কার্যকর সমাধান। এখন আপনার মনে প্রশ্ন থাকতে পারে উড়োজাহাজ থাকতে ড্রোন কেন ব্যবহার করব? হ্যা, সেটাই কেন ড্রোন ব্যবহার করবেন। 

আসলে এখানে যেহেতু জীবন বাচানোর কথা বলা হচ্ছে? তাই সবার জীবনের মূল্যটাই আপনার কাছে বেশি হওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আমি যদি উড়জাহাজের কথা চিন্তা করে থাকি তবে তার জন্য আমাকে একজন পাইলট পাঠাতে হবে। 

এতে করে আপনি তার জন্যও এক হুমকি দাড় করে দিলেন। তবে আপনি যদি ড্রোন ব্যবহার করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে কোন মানুষের জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দিতে আর হবে না।

পণ্য ডেলিভারী

হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন। ডেলিভারি এর কাজে এই ড্রোন ব্যবহার করা হয়। আর এর প্রচলন শুরু হয় অ্যামাজনের হাত ধরে ২০১৩ সালের দিকে। তারা এই ড্রোনের মাধ্যমে দূর দূরান্তে মালামাল বা পণ্য পাঠানোর ব্যবস্থা চালু করে। বর্তমানে তাদের দেখেই আরও অনেকেই এই ব্যবস্থাকে আপন করে নিয়েছে।

পরিশেষে বলা যায় ড্রোন এর মতো প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে করেছে আরও স্বাছন্দ্যময়। সেই সাথে যোগ করেছে কিছু বাড়তি সুযোগ সুবিধা। আর আমাদের যথাযথ প্রয়োগের মাঝেই এর সার্থকতা লুকিয়ে রয়েছে। তাই আমরা যদি এর যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তা হলেই আমাদের প্রযুক্তির ব্যবহার সার্থক বলে মনে করি।
Lekha-Lekhi

lekha-lekhi.com এই ওয়েবসাইটটি মূলত একটি তথ্যমূলক ব্লগ। নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন