টেলিফোন কাকে বলে | টেলিফোন ব্যবহারের নিয়ম

টেলিফোন একটি ইংরেজি শব্দ। টেলিফোন শব্দটি ভাঙ্গালে টেলি অর্থ দূর এবং ফোন অর্থ ধ্বনি পাওয়া যায়। বাংলায় এ যন্ত্রটিকে দূরালাপনী বা দূরভাষ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
টেলিফোন
টেলিফোন

টেলিফোন কি?

টেলিফোন হল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত একটি যােগাযােগের মাধ্যম। আমরা এখন এই টেলিফোন ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে এক মানুষে থেকে অন্য মানুষের সাথে যােগাযােগ করতে পারি।

টেলিফোন কত প্রকার?

টেলিফোন বিভিন্ন প্রকার হয়ঃ
  • ক্যান্ডেলস্টিক-1890 এর
  • ডেস্কটপ রোটারি-1920 এর
  • স্পর্শ করুন টোন-1960 এর 
  • ওয়াল টাচ টোন-1970 এর
  • কর্ডলেস ফোনস- 80 এর দশকে
  • প্রথম মোবলি ফোন- 883 এর
  • আইফোন 6- বর্তমান দিন ইত্যাদি। 

ডিজিটাল টেলিফোন কি? 

আধুনিক সব ধরনের সুবিধা নিয়ে যে টেলিফোন তৈরি করা হয় তাকে ডিজিটাল টেলিফোন (Digital Telephone) বলে।
 

ডিজিটাল টেলিফোনের প্রধান বৈশিষ্ট্য কি?

ডিজিটাল টেলিফোনের প্রথম ও প্রধান বৈশিষ্ট্য হল ডিজিটাল সিগনালের মাধ্যমে বার্তা প্রেরণ করা।

ডিজিটাল টেলিফোনের সুবিধা?

  • অ্যানালগ টেলিফোনের চেয়ে ডিজিটাল টেলিফোনের দক্ষতা অনেক বেশি।
  • এ ধরনের টেলিফোনে ডিজিটাল সিস্টেম RF (Radio Frequency) ট্রান্সমিটারের পাওয়ারকে অনেক হ্রাস করে।
  • এ ধরনের টেলিফোনে আন্তর্জাতিক ও ওয়াইড এরিয়ার রােমিং সুবিধা বেশি।
  • এ ধরনের টেলিফোনে নিরাপত্তা ও প্রাইভেসি অনেক বেশি।
  • এ ধরনের টেলিফোনে কথা বলার খরচ অনেক কম।
  • এ ধরনের টেলিফোন পরিবেশ বান্ধব ও দীর্ঘ সময় ব্যবহারেও নষ্ট হয় না।

টেলিফোনের কাজ কি?

একটি টেলিফোনের সাধারণত পাঁচটি অংশ থাকে। সে অংশগুলোর কাজ হলঃ
  • সুইচ
  • রিংগার
  • কি-প্যাড
  • মাইক্রোফোন
  • স্পিকার

টেলিফোন সুইচের কাজ কি?

টেলিফোন সুইচের কাজ হল টেলিফোন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত অথবা বিচ্ছিন্ন করা।

টেলিফোন রিংগারের কাজ কি?

টেলিফোন রিংগার এর কাজ হল শব্দ করে টেলিফোন ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেওয়া যে কেউ একজন যােগযােগ করেছে।

টেলিফোন কি-প্যাডের কাজ কি?

টেলিফোন কি-প্যাড ব্যবহার করে একজন অন্য একজনকে ডায়াল করতে পারে। 

টেলিফোন মাইক্রোফোনের কাজ কি?

টেলিফোন মাইক্রোফোন আমাদের কণ্ঠস্বরকে বৈদ্যুতিক সিগন্যালে পরিবর্তন করে।

টেলিফোন স্পিকারের কাজ কি?

টেলিফোন স্পিকার বিদ্যুতিক সিগন্যালকে শব্দে রূপান্তর করে শােনার ব্যবস্থা করে দেয়।

টেলিফোন কীভাবে কাজ করে?

যখন কোনও ব্যক্তি টেলিফোনে কথা বলেন। তখন তার কণ্ঠে তৈরি শব্দ তরঙ্গ মুখপত্রটিতে প্রবেশ করে। যার ফলে বৈদ্যুতিক কারেন্ট যার সাথে কথা বলছে তার টেলিফোনে শব্দটি বহন করে থাকে। 

এবং কোনও ব্যক্তি টেলিফোনে কথা বলার সময় শব্দ তরঙ্গগুলো ডায়াফ্রেমটিকে আঘাত করে কমিয়ে দেয়।

টেলিফোন কিভাবে সংযোগ দেওয়া হয়?

প্রত্যেকটি টেলিফোনই তামার তার দিয়ে আঞ্চলিক অফিসের সাথে যুক্ত থাকে। আমরা যখন কোন কথা বলার জন্য কোন নম্বরে ডায়াল করি। তখন আঞ্চলিক অফিসে সেই তথ্যটি পৌঁছে যায়। 

এরপর সেখানে একটি সুইচ বাের্ড থাকে। যা নির্দিষ্ট গ্রাহকের টেলিফোনের সাথে যুক্ত করে দেয়। আর যদি আমরা অনেক দূরে কিংবা ভিন্ন কোন দেশে অন্য একজনের সাথে কথা বলতে চাই। 

তাহলে সুইচবাের্ড সেভাবে আমাদেরকে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করে দেয়। প্রযুক্তির উন্নতি হওয়ার আগে যখন পৃথিবীর দুই প্রান্তের দুইজন মানুষ টেলিফোনে কথা বলত। 

তখন কথাবার্তা পাঠানাের জন্য তাদের টেলিফোনকে তামার তার দিয়ে সংযুক্ত করে দিতে হতাে। সে কারণে সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটা ছিল অনেক খরচ সাপেক্ষ। আধুনিক যােগাযােগ ব্যবস্থায় পুরােটা সিস্টেমটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। 

এখন একটি অপটিক্যাল ফাইবারে একই সাথে আক্ষরিক অর্থে লক্ষ লক্ষ মানুষের কথাবার্তা পাঠানাে সম্ভব। তাই টেলিফোনে কথা বার্তা বলার বিষয়টি অনেক সহজতর হয়ে গিয়েছে।

টেলিফোন আবিষ্কারের ইতিহাস?

টেলিফোন আবিষ্কারের কথা আমাদের অনেকের জানা আছে। এ এক বিস্ময়কর আবিষ্কার ছিল। বিভিন্ন পথ পরিক্রমায় আজকের আধুনিক মোবাইল ফোন। আর এর আসল পথপ্রদর্শক হল টেলিফোন। 

আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল স্কটল্যান্ডের এডেনবার্গে ১৮৪৭ সালের ৩ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। এবং তিনি ১৯২২ সালের ২ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন। তার জীবনদ্দশায় তিনি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। 

যা মানব কল্যাণের ইতিহাসে চির স্মরণীয়  থাকবে। এর মধ্যে টেলিফোন অন্যতম। গ্রাহাম বেলের মা এবং স্ত্রী দুজনেই কানে শুনতে না। তারা ছিলেন বধির। 

আর এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল শ্রবণশক্তি সম্পর্কিত একটি ডিভাইস নিয়ে কাজ করেন। ঠিক এর এক পর্যায়ে তিনি টেলিফোন অবিষ্কার করেন। 

১৮৭৫ সালে আলেকজান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করেছিলেন। নানা ধরনের বিবর্তনের মধ্য দিয়ে সেটি বর্তমান আধুনিক টেলিফোনে রূপ নিয়েছে। কিন্তু টেলিফোনের মূল কাজ করার প্রক্রিয়াটি ঠিক এখনো ঠিক আগের মতােই রয়েছে।

টেলিফোন ব্যবহারের নিয়ম?

টেলিফোন ব্যবহারের কিছু সাধারণ নিয়মসমুহ দেয়া হল যা মেনে চলা আমাদের সকলের কর্তব্যঃ
  • টেলিফোনটি এমন জায়গায় রাখুন যেন খুব সহজে রিসিভ করা যায়।
  • টেলিফোনের পাশে দরকারি কাগজ এবং কলম রাখুন। যেন প্রয়োজনের মুহুর্তে কোন মেসেজ বা নম্বর লিখতে কাগজ কলম হাতের কাছেই পেয়ে যান।
  • সর্বোচ্চ তিন বার রিং এর মধ্যেই টেলিফোন রিসিভ করুন।
  • টেলিফোন হোল্ড করিয়ে রাখতে হলে কলকারীকে জানিয়ে হোল্ড করবেন। এবং সম্ভাব্য সময় জানিয়ে রাখুন।
  • টেলিফোন রিসিভ করে সালাম দিন এবং আপনার পরিচয় দিন। তারপর অফিসের ক্ষেত্রে অফিসের নাম, আপনার নাম এবং আপনার পদ মর্যাদা ইত্যাদি জানান।
  • টেলিফোনে অতি উচ্চস্বরে অথবা অতি নিম্ন স্বরে কথা বলবেন না।
  • কলকারীর কথা শুনতে না পেলে বিনীতভাবে আরেকটু জোরে বলতে অনুরোধ করুন। এবং কথা বুঝতে না পারলে কথাটি আরেক বার বলতে অনুরোধ করুন।
  • কথা চলা অবস্থায় লাইন কেটে গেলে যে টেলিফোন করেছে তার দায়িত্ব পুনরায় উনাকে কল করা।
  • অনেক টেলিফোনেই স্পীকার রয়েছে। এবং হ্যান্ডস ফ্রী অপশন রয়েছে। টেলিফোনে স্পীকার দিয়ে শুনতে চাইলে অবশ্যই অপর পক্ষের অনুমতি নিয়ে তবেই স্পীকার ব্যবহার করবেন।
  • ধর্মীয় স্থান, পাবলিক প্লেস, মিটিং, শিক্ষালয়ে টেলিফোন বন্ধ রাখুন।
  • কোন মিটিং বা পার্টিতে কল আসলে সেক্ষেত্রে কলকারীকে আপনার অবস্থান জানান। এবং কখন আপনি কল ব্যাক করতে পারবেন সেটিও জানান। জরুরী হলে আপনি অন্য সবাইকে “সরি” জানিয়ে পার্টি থেকে আলাদা হয়ে কথা বলতে পারেন।
  • কোথাও টেলিফোন করে যদি সেখানে ভয়েস মেসেজ রাখতে হয়। সেক্ষেত্রে আপনার নাম এবং ফোন নম্বরটি স্পষ্টভাবে দুই বার বলতে পারেন।
  • পাবলিক প্লেসে টেলিফোনে উচ্চস্বরে কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। প্রয়োজনে অপর প্রান্তকে জানান আপনি বাসে/ট্রেনে থাকায় শুনতে সমস্যা হচ্ছে। সুবিধাজনক সময়ে আপনি ফোন করতে পারেন।
  • কথা শেষ হয়ে গেলে কলকারী কলটি কেটে দিবেন।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ডিজিটাল টেলিফোন ব্যবস্থা কবে চালু হয়?

৪ জানুয়ারী ১৯৯০ সালে চালু হয়।

টেলিফোনের উদ্ভাবন কবে হয়েছিল?

টেলিফোনের উদ্ভাবন করা হয়েছিল ১৮৭৬ সালের ১০ মার্চ।

আমরা ফোন ধরে হ্যালো বলি কেন?

বাবা-মা, ভাইবোন, স্বামী-স্ত্রী, বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমরা সাধারণত ফোন রিসিভার তুলেই হ্যালো বলে সম্বোধন করি। 

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই ‘হ্যালো’ শব্দটি কেন বলি বা এর উৎপত্তি কোথায় অথবা কখন থেকে কীভাবে হ্যালো বলা শুরু হয় তা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা। চলুন জেনে নেওয়া যাকঃ

হ্যালো ছিল একটি মেয়ের নাম। মেয়েটির পুরো নাম হচ্ছে মার্গারেট হ্যালো (Margaret Hello)। তিনি ছিলেন আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের গার্লফ্রেন্ড। 

গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করে তিনি প্রথম যে কথাটি বলেছিলেন তা হল ‘হ্যালো’।  সেই থেকেই হ্যালো শব্দটি বিশ্বজুড়ে টেলিফোন ব্যবহারকারীদের কাছে একটি প্রিয় শব্দ। 

মানুষ গ্রাহাম বেলকে ভুলে গেলেও কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষটিকে এখনো ভুলেনি। টেলিফোন নামক যন্ত্রটি যতদিন থাকবে ততদিন মার্গারেট হ্যালো শব্দটি বেঁচে থাকবে মানুষের মুখে মুখে।

আজকে দিনে টেলিফোনটি কীভাবে ব্যবহৃত হয়?

প্রথম টেলিফোন লাইনগুলো একজনের ফোন থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে গিয়েছিল। আজ সেল ফোন আছে। যার কোন তারের দরকার নেই। তারা সিগন্যাল ব্যবহার করে যা বায়ু দিয়ে ভ্রমণ করে। 

এমন পদার্থ দ্বারা চালিত যা পদার্থবিজ্ঞানের উপর নির্ভর করে থাকে। যার কারণে অনেকের কাছে এখন আর ল্যান্ডলাইন নেই। কেবল তারা সেল ফোনের উপর নির্ভর করে।
Lekha-Lekhi

lekha-lekhi.com এই ওয়েবসাইটটি মূলত একটি তথ্যমূলক ব্লগ। নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন