ই-লার্নিং কি | ই লার্নিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

ই লার্নিং এর পূর্ণরূপ কি?

ই-লার্নিং এর পূর্ণরূপ হল ইলেকট্রোনিক লার্নিং (Electronic Learning)।
ই লার্নিং
ই লার্নিং

ই-লার্নিং কি?

ই-লার্নিং এর অর্থ হল ইন্টারনেট থেকে শিক্ষা নেওয়া। অর্থাৎ আমরা যদি ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু শিখে থাকি তাহলে সেটাই হচ্ছে ই-লার্নিং। ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে ‘ই’ অর্থ ‘ইলেক্ট্রনিক’ বুঝায়। অর্থাৎ বৈদ্যুতিক শিক্ষা বা ইলেকট্রনিক শিক্ষা।

এ শিক্ষাটি মূলত অনলাইন ভিত্তিক শিক্ষামূলক প্লাটফর্ম। যেখানে বিভিন্ন ধরনের কোর্স দেওয়া থাকে। আপনি ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক লার্নিং ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। ১৯৯৯ সালে এলিয়ট মাইসি  “eLearning” শব্দটি তৈরি করেছিলেন। 

পরবর্তীতে বিশ্ব জুড়ে কম্পিউটারের সূচনার ব্যপকতা এবং সময়ের পালাক্রমে স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদি সহজলভ্য হওয়ার ফলে ই-লার্নিং বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয় এবং মানুষ এটিকে খুব সহজেই গ্রহণযোগ্য করে তুলে।

ই-লার্নিং কাকে বলে?

পৃথিবীর গতানুগতিক শেখার ধারাকে পাল্টে দিয়ে নতুন ও তথ্য বহুল শেখার যে পদ্ধতি চালু হয়েছে তার নাম হল ই-লার্নিং অর্থাৎ ইলেকট্রিক লার্নিং। মূলত এটি পুরাতন ধারার একটি পরিপূরক। 

পুরাতন শেখার পদ্ধতিতে অনেক বিমূর্ত জিনিস শ্রেণিকক্ষে বুঝানো সম্ভব হতো না। সেই অসম্ভবকে নতুন গতি দিয়ে সম্ভব করতে শ্রেণিকক্ষে ই লার্নিং এর ব্যবস্থা করা হয়। ই-লার্নিং মূলত অনালাইন ভিত্তিক শিক্ষা মাধ্যম।

ই লার্নিং এর উপাদান কি কি?

স্মার্ট মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, স্মার্ট টেলিভিশন, ইন্টারনেট সংযোগ, মোবাইলে ইন্টারনেট ডাটা ইত্যাদি হল ই-লার্নিং এর উপাদান।

ই লার্নিং এর ইতিহাস?

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধনের ফলে ই-লার্নিং এর উদ্ভব হয়েছে। ই লার্নিং এর ইতিহাস আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। "ই-লার্নিং" শব্দটি প্রথমবারের মতো ১৯৯৯ সালে এলিয়ট ম্যাসি ডিজনি ওয়ার্ডে টেকলার্ন সম্মেলনের সময় উল্লেখ করেছিলেন। 

এরপর ওহিও স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সিডনি প্রেসি প্রথমবারের মত বৈদ্যুতিক লার্নিং মেশিন তৈরী করেন। কিন্তু তারও আগে ১৭২৮ সালে কালেব ফিলিপস ইমেইল এর মাধ্যমে দূরবর্তী লার্নিং কোর্স চালু করেছিলেন। ঠিক এরপর ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠা হল অনেক অনলাইন ভিত্তিক স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। 

তবে বর্তমানে উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও এর প্রভাব বিস্তার করেছে। ব্যক্তিগত উদ্যেগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যেগে ই-লার্নিং ব্যাবস্থাটি চালু করা হয়েছে।

ই-লার্নিং ও বাংলাদেশ?

বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও এখন ই-লার্নিং এর ব্যাপক প্রসার লক্ষ্য করা যায়। এক্ষেত্রে ব্যাপক সরকারি প্রণোদনাও প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি মন্ত্রণালয় ই-লার্নিং সিস্টেম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে যেকোন শ্রেণির বোর্ড বইগুলোর ই-বুক তৈরি, ই-স্কুল প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।www.ebook.gov.bd হল সরকারি একটি ই-বুক ওয়েবসাইট। যেখান থেকে সকল পাঠ্যবই ও বোর্ড বইয়ের ই-বুক ভার্সন বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। 

যে কোন পাঠ্যক্রমের জন্য বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া কনটেন্ট বিনামূল্যে পাবার অপর একটি ই-লার্নিং সাইট হল www.teachers.gov.bd। এখান থেকে বিভিন্ন মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টসমূহ বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। 

সরকারিভাবে এ সাইটটি শিক্ষক বাতায়ন নামে পরিচিত। এছাড়াও বেসরকারি উদ্যোগে পরিচালিত বেশ কিছু ই-লার্নিং ওয়েবসাইট যেমনঃ ictshikka.org, shikkhok.com, 10minuteschool.com প্রভৃতিও বাংলা ই-লার্নিং ওয়েবসাইট হিসেবে বেশ জনপ্রিয় অর্জন করেছে।

ই-লার্নিং কনটেন্ট এর উৎস?

গুগল, উইকিপিডিয়া, ব্লগ, ইউটিউব, ফেসবুক, ই-বুক, বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং বিষয় ভিত্তিক দক্ষ শিক্ষকদের তৈরি রাইটিং ও ভিডিও কনটেন্ট ই-লার্নিং কনটেন্ট এর উৎস।

ই-লার্নিং এর সুবিধাসমুহ?

ই-লার্নিং ব্যবস্থার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল নিজের ঘরে বসেই ক্লাশ করা। এক্ষেত্রে ইউডাসিটি, লিন্ডা, কোর্সেরা, ইউডেমির মত ই-লার্নিং প্ল্যাটফর্মের সুখ্যাতির কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। 

আর বর্তমান সময়ে ই-লার্নিং এর জনপ্রিয়তা খুব বেশি। মানুষ এখন তার নিজ বাসায় বসে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক কোর্স এবং দক্ষতামূলক কোর্স করতে পারেন। এটি অনলাইনে কোর্স সরবরাহ করার একটি খুব দক্ষ মাধ্যম। 

যেখানে আপনি খুব সহজেই রেজিস্টার ও অন্যান্য নিয়ম কানুন সরবরাহ করে অনলাইনে কোর্স করতে পারবেন। এছাড়াও শারীরিক শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজন নেই ই-লার্নিং এর ক্ষেত্রে। অনলাইনে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ক্লাস করার সুযোগ থাকে ই-লার্নিং এর মধ্যে। 

আর যারা চাকুরির পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান। তবে আপনার জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ই-লার্নিং ভিত্তিক কোর্স। আর আপনার ব্যয় হ্রাস করতে আপনি চাইলে ই-লার্নিং কোর্স ব্যবহার করতে পারেন। 

আবার অনেকেই আছেন সময়ের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ডিগ্রীটি অর্জন করতে পারছেন না। কিন্তু ই-লার্নিং ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী আপনি যেকোন সময় আপনার ক্লাস করতে পারবেন।

ই-লার্নিং এর মাধ্যমে আপনি পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে থাকাকালীন সময়ে কিংবা বাসে চড়ার সময় যে কোনও জায়গা থেকে অথবা বাড়ি থেকে আপনার প্রতিদিনের ক্লাস করতে পারবেন। 

ই-লার্নিং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে বিভিন্ন কোর্স শিখতে করতে পারবেন। ই-লার্নিং আপনাকে বিশ্বের যে কোনও স্থানে অবস্থিত যে কোনও ব্যক্তির কাছ থেকে শেখার সুযোগ দেয়। ই-লার্নিং শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের অডিও এবং ভিডিও রেকর্ড করতে দেয়। 

যা পরীক্ষামূলক পরীক্ষণ, পাঠ, বক্তৃতা এবং অন্যান্য স্কুল ও কলেজের কাজের জন্য নিখুঁত হয়। ই-লার্নিং এর মাধ্যমে অনলাইন পরীক্ষা নেওয়া, নিবন্ধগুলো পড়তে এবং ভিডিও দেখার সুযোগ দেয়। 


এছাড়াও আলোচনা বোর্ড এবং আড্ডার মাধ্যমে আপনি অনলাইনে সবার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন। আর যদি কোন পাঠ্য বিষয়ে সমস্যা থাকে। 

তবে আপনার সন্দেহগুলোও আপনার কোর্স এক্সপার্টদের সাথে শেয়ার করে তার সমাধান করতে পারবেন। নিচের ই-লার্নিং এর আরও কিছু সুবিধা দেওয়া হলঃ
  • ই-লার্নিং এর মাধ্যমে যে কোন শিক্ষার্থী সহজে ও সস্তায় প্রয়োজনীয় বিষয়ের উপর একাধিক দেশের একাধিক শিক্ষকের লেকচার দেখে ও শুনে সহজে শিখতে পারেন৷
  • ই-লার্নিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী একই লেকচার এবং পাঠ থেকে যতবার ইচ্ছা অনুশীলন করতে পারেন।
  • ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে প্রশিক্ষন গ্রহণে ব্যক্তি নিজে কিংবা প্রতিষ্ঠানে তাদের নিজস্ব কর্মীদের গতানুগতিক প্রশিক্ষন প্রদানে যে বিশাল ব্যায় হয় তা প্রায় ৮০% কমাতে সহায়তা করে।
  • ই-লার্নিং এর মাধ্যমে জ্ঞান এবং দক্ষতার উন্নয়ন করে আত্নকর্মসংস্থান সৃষ্টি কিংবা চাকুরি ও ব্যবসায়ে সমৃদ্ধি অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেন৷
  • ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুবিধামত যেকোন সময় পৃথিবীর যেকোন স্থানে থেকেও পাঠ্য গ্রহণ করতে পারেন।
  • দেশে থেকেও অনলাইনের মাধ্যমে বিদেশী ডিগ্রী এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন সহজে ই-লার্নিং এর মাধ্যমে গ্রহণ করতে পারেন।
  • যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দক্ষ শিক্ষকের স্বল্পতা এবং উন্নত বৈজ্ঞানিক ল্যাবের অভাব রয়েছে। সেখানে ই-লার্নিংই হতে পারে বিকল্প সমস্যার সমাধান।
  • এক্ষেত্রে যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ শিক্ষকের লেকচার এবং বৈজ্ঞানিক ল্যাবে পরীক্ষার ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে শ্রেণি কক্ষে শিক্ষা প্রদান করা যায়৷


ই-লার্নিং এর অসুবিধা?

ই-লার্নিং এর অনেক সুবিধা থাকা সত্বেও এর কিছু অসুবিধা আছে। আর যারা কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহার করে না। তারা এই শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না। এছাড়াও ভিডিও কনফারেন্স, ওয়েবিনার এবং সামনের মুখোমুখি ভিডিও চ্যাট ব্যবহারের মাধ্যমে ই-লার্নিং ক্লাস পরিচালিত হয়ে থাকে।

তবে ই-লার্নিং এর মাধ্যমে সামনা সামনি পাঠদানে শিক্ষার্থীরা তাদের সমস্যাগুলো তেমন সহজে প্রকাশ করতে পারে না। তাই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া সীমিত হয়ে থাকে। ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে আপনি অনলাইনে ই-লার্নিং ক্লাস বুঝতে তেমন পারবেন না।

পরিশেষে বলা যায় বর্তমান সময়ে মানুষ তাদের সময় ও ব্যয় হ্রাস করতে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কোর্স করে নিজেদের দক্ষতা অর্জন করছে। আর এজন্যই ই-লার্নিং এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে।
Lekha-Lekhi

lekha-lekhi.com এই ওয়েবসাইটটি মূলত একটি তথ্যমূলক ব্লগ। নিত্য নতুন তথ্য পেতে আমাদের এই ব্লগটি নিয়মিত ভিজিট করতে পারেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন